1. ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে আরবরা ভারতের রাজ্য বিস্তারে উদ্যোগী হয় । দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর অবশেষে ৭১২ খ্রিস্টাব্দে আরব সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাসিম ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত সিন্ধু দেশ এবং ৭১৩ খ্রিস্টাব্দে মুলতান জয় করেন । একাদশ শতকে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত গজনীর তুর্কি শাসক সুলতান মাহমুদ (Sultan Mahmud) ভারত আক্রমণ করতে থাকেন । 1000 থেকে 1027 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি মোট 17 বার ভারত আক্রমন করেন । তিনি কেবলমাত্র পাঞ্জাব ও মুলতান নিজের সাম্রাজ্যভুক্ত করেন এবং এর ফলে ভারতের মুসলিম প্রভুত্বের পথ সুগম হয় ।
2. মুহাম্মদ ঘুরীর আক্রমণঃ তিনি ছিলেন গজনী এবং ঘুর রাজ্যের অধিপতি গিয়াসউদ্দিন ঘুরির ভ্রাতা ও সেনাপতি। তিনি দ্বাদশ শতকে ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারে সচেষ্ট হন এবং মুলতান , পেশোয়ার ,লাহোর , পশ্চিম পাঞ্জাব ইত্যাদি জয় করেন। চৌহান বংশীয় রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহান (1192 খ্রিঃ) ও গাড়োয়াল রাজ জয়চন্দ্র তার হাতে পরাজিত এবং নিহত হন । রাজ্যগুলোর শাসনভার তার অনুচর কুতুবুদ্দিন আইবকের উপর অর্পণ করে তিনি গজনীতে প্রত্যাবর্তন করেন । কুতুবউদ্দিনের অন্যতম সেনাপতি ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব ভারতের মুসলিম আধিপত্য বিস্তার করেন । মোহাম্মদ ঘুরি ছিলেন ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ।
3. ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে নিঃসন্তান মুহাম্মদ ঘুরীর মৃত্যু হলে গজনির সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে কুতুবউদ্দিন আইবক নিজেকে স্বাধীন নরপতি রূপে ঘোষণা করেন । তিনি সুলতান উপাধি ধারণ করেন (১২০৮ খ্রিঃ)। তার সিংহাসনের আহরণের ফলে দিল্লিতে স্বাধীন সুলতানি সাম্রাজ্যের সূচনা হয় ।
আইবক কথার অর্থ দাস । কুতুবউদ্দিন আইবক মুহাম্মদ ঘুরীর ক্রীতদাস ছিলেন ।এলফিনস্টোন ,স্মিথ প্রমূখ ইতিহাসবিদগণ তাই তার প্রতিষ্ঠিত রাজবংশকে দাস বংশ এবং ১২০৬ থেকে ১২৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে দাস বংশের শাসনকাল বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি স্বাধীন দিল্লি সুলতানির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
4. কুতুবউদ্দিন এর মৃত্যুর পর তার দত্তক পুত্র আরাম শাহ দিল্লির সিংহাসনে বসেন। কিন্তু তিনি খুবই অকর্মণ্য থাকায় ইলতুৎমিশ ১২১১ খ্রিস্টাব্দে তাকে সিংহাসনচ্যুত করে দিল্লীর সিংহাসন দখল করেন ।
প্রথম জীবনে তিনি ক্রীতদাস ছিলেন পরে নিজেও কর্মদক্ষতা এবং বিচক্ষনতার গুণে দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করেন এবং কুতুবুদ্দিন নিজের সন্তানের সাথে তার বিবাহ দিয়ে তাকে বদায়ুন প্রদেশের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন ।
5.ইলতুৎমিসের রাজত্বকালে ( ১২১১ খ্রিঃ )দুর্ধর্ষ মোঙ্গল নায়ক চেঙ্গিস খান -এর ভারত আক্রমণ এর সম্ভাবনা দেখা দেয় এবং তিনি সিন্ধু নদীর তীরে উপস্থিত হন। ইলতুৎমিস বিচক্ষণতার মাধ্যমে চেঙ্গিস খানকে ভারত ত্যাগে বাধ্য করেন । এর ফলে সুলতানি সাম্রাজ্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায় । ইলতুৎমিস কে দিল্লি র তুর্কি সুলতান বা দাস বংশীয় সুলতানদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সুলতান বলা হয় । অনেকের মতে তিনি হলেন দিল্লি সুলতানির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ।
6. ইলতুৎমিস এর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রুকনউদ্দিন ফিরোজশাহ আসনে বসেন । কিন্তু তিনি দুর্বল চিত্ত ও অপদার্থ হওয়ায় তা রাজত্বকালে সাম্রাজ্যে অভ্যন্তরে নানা স্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং শেষ পর্যন্ত দিল্লির একদল ওমরাহর সমর্থন নিয়ে ইলতুৎমিস কন্যা রাজিয়া সুলতানা সিংহাসনে বসেন (১২৩৬-১২৪০ খ্রিঃ )।তিনি একমাত্র নারী যিনি দিল্লির সিংহাসনে আরোহন করেন ।
তার রাজত্বকাল এই সর্বপ্রথম রাজতন্ত্রের সঙ্গে তুর্কি অভিজাত্যের ক্ষমতা লড়াই শুরু হয় । এই অভিজাত বর্গ চল্লিশ চক্র বা বন্দেগান-ই-চেহেলগান নামে পরিচিত ছিলেন । পরবর্তীকালে তুর্কি অভিজাতবর্গ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে । এই সংঘর্ষে তিনি পরাজিত ও নিহত (১২৪০ খ্রিঃ) হন ।
তার রাজত্বকাল এই সর্বপ্রথম রাজতন্ত্রের সঙ্গে তুর্কি অভিজাত্যের ক্ষমতা লড়াই শুরু হয় । এই অভিজাত বর্গ চল্লিশ চক্র বা বন্দেগান-ই-চেহেলগান নামে পরিচিত ছিলেন । পরবর্তীকালে তুর্কি অভিজাতবর্গ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে । এই সংঘর্ষে তিনি পরাজিত ও নিহত (১২৪০ খ্রিঃ) হন ।
7. রাজিয়া সুলতানার মৃত্যুর পর মুইজউদ্দিন বাহারাম শাহ (১২৪০-৪২ খ্রিঃ), আলাউদ্দিন মামুদ শাহ (১২৪২-৪৬ খ্রিঃ), নাসির উদ্দিন মামুদ শাহ (১২৪৬-৬৬ খ্রিঃ) সিংহাসনে বসেন । এই বংশের শেষ শাসক নাসিরুদ্দিন মামুদ শাহ নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে তার শ্বশুর ও প্রধানমন্ত্রী উলুঘ খাঁ " গিয়াসউদ্দিন বলবন " নাম ধারণ করে সিংহাসনে বসেন ।তার রাজত্বকাল দিল্লি সুলতানি ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য অধ্যায় ।
বলবন তৎকালীন চল্লিশ চক্রকে ধ্বংস করেন এবং মেওয়াটি দস্যুদের দমন করেন । এর মাধ্যমে তিনি তার সাম্রাজ্যে এক নতুন রাষ্ট্রীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তিনি নিজে নায়েবৎ-ই- খুদাই উপাধি গ্রহণ করেন । তিনি দরবারের বিখ্যাত পারসিক রীতি সিজদা (সিংহাসনের সামনে নতজানু হওয়া) ও পাইবস (সম্রাটের পদযুগল চুম্বন করা) প্রথার প্রবর্তন করেন । তিনি দরবারে আমোদ-প্রমোদ হাস্যকৌতুক মদ্যপান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেন । বাংলার শাসনকর্তা তুঘ্রিল খাঁ বিদ্রোহী হয়ে উঠলে তিনি তুঘ্রিল খাঁ-কে পরাজিত ও হত্যা করেন। তার সময়কালে বর্তমান গুপ্তচর ব্যবস্থা (বারিদ ) কে তিনি আরো শক্তিশালী করেন এবং একটি পৃথক সামরিক দপ্তর দেওয়ান -ই-আরজ গঠন করেন ।
বলবন তৎকালীন চল্লিশ চক্রকে ধ্বংস করেন এবং মেওয়াটি দস্যুদের দমন করেন । এর মাধ্যমে তিনি তার সাম্রাজ্যে এক নতুন রাষ্ট্রীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তিনি নিজে নায়েবৎ-ই- খুদাই উপাধি গ্রহণ করেন । তিনি দরবারের বিখ্যাত পারসিক রীতি সিজদা (সিংহাসনের সামনে নতজানু হওয়া) ও পাইবস (সম্রাটের পদযুগল চুম্বন করা) প্রথার প্রবর্তন করেন । তিনি দরবারে আমোদ-প্রমোদ হাস্যকৌতুক মদ্যপান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেন । বাংলার শাসনকর্তা তুঘ্রিল খাঁ বিদ্রোহী হয়ে উঠলে তিনি তুঘ্রিল খাঁ-কে পরাজিত ও হত্যা করেন। তার সময়কালে বর্তমান গুপ্তচর ব্যবস্থা (বারিদ ) কে তিনি আরো শক্তিশালী করেন এবং একটি পৃথক সামরিক দপ্তর দেওয়ান -ই-আরজ গঠন করেন ।
8. বলবনের মৃত্যুর পর মুইজউদ্দিন কায়কোবাদ (১২৮৭-৯০ খ্রিঃ)ও কায়ুমর্স (১২৯০ খ্রিঃ) সিংহাসনে বসেন । জালালুদ্দিন খিলজী প্রথমে অসুস্থ কায়কোবাদ ও পরে কায়ুমর্সকে হত্যা করে খলজি বিপ্লব ঘটান এবং খলজি রাজবংশের সূচনা করেন।
আমাদের সাথে facebook page এ যুক্ত থাকতে এই লিঙ্কে click করুন
আমাদের সাথে facebook page এ যুক্ত থাকতে এই লিঙ্কে click করুন
Please do not enter any spam link in the comment box