Ad-1

if( aicp_can_see_ads() ) {

ভারতের বন্দর সমূহ (Ports of India)

ভারতের বন্দর সমূহ


বন্দরের সংজ্ঞাঃ 

নদী এবং সমুদ্র তীরবর্তী এমন একটি স্থান যেখানে জাহাজ নোঙ্গর করে আমদানিকৃত মাল খালাস করে কিংবা রপ্তানিযোগ্য মাল ভরাট করে , যাত্রী পরিবহন করে , প্রয়োজনীয় মেরামত করে এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সময় অবস্থান করে সেই নির্দিষ্ট স্থানকে বন্দর বলে ।

পশ্চাৎভূমিঃ  কোন দেশের মধ্যে অবস্থিত মধ্যস্থিত যেসব অঞ্চলে রপ্তানিযোগ্য উৎপাদিত দ্রব্য কোন বন্দরের মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হয় এবং বন্দরের মাধ্যমে আমদানিকৃত দ্রব্যাদি যেসব অঞ্চলে পাঠানো হয় তখন সেই সব নির্দিষ্ট অঞ্চলকে ওই নির্দিষ্ট বন্দরের পশ্চাদভূমি বলা হয় ।

পোতাশ্রয়ঃ  কোন বন্দর সান্নিধ্য এমন একটি স্থান যেখানে জাহাজ প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনে মেরামতির কাজ সারতে পারে কিংবা নিরাপদে দ্রব্যাদি খালাস ও বোঝাই করতে পারে তাকেই পোতাশ্রয় বলে।

১। মুম্বাই  মহারাষ্ট্র  রাজ্যের অন্তর্গত পশ্চিম উপকূলে আরব সাগরের তীরে কঙ্কন সমভূমিতে এবং মুম্বাই দ্বীপের আড়ালে মুম্বাই বন্দরটি অবস্থিত।  পণ্য চলাচলের পরিপেক্ষিতে এটি বর্তমান ভারতের বৃহত্তম বন্দর।

এটি  স্বাভাবিক পোতাশ্রয় যুক্ত এবং সামুদ্রিক বন্দর। পোতাশ্রয়টির আয়তন প্রায় 200 বর্গকিলোমিটার এবং জলের গভীরতা 10 মিটার । ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে জলপথে ভারতে আসতে হয় বলে একে বলা হয় ভারতের প্রবেশদ্বার।  এখানে ভিক্টোরিয়া , প্রিন্সেস এবং আলেকজান্দ্রা নামে তিনটি ডক  ও দু'টি ড্রাই ডক আছে । বড় বড় জাহাজ খুব সহজেই এই বন্দরে প্রবেশ করতে পারে ।ভারতের বন্দরগুলোর মোট পণ্য চলাচলের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এই বন্দরের মাধ্যমে হয়।

২। কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি নদীর তীরে তথা বঙ্গোপসাগরের উপকূল থেকে প্রায় 128 কিলোমিটার অভ্যন্তরে ভারতের একমাত্র নদীবন্দর  কলকাতা অবস্থিত । কলকাতা বন্দর ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম বন্দর । ভারতের একমাত্র নদীবন্দরের পোতাশ্রয় কৃত্রিম।  এই বন্দরের দুটি ডক( সুভাষ ডক ও  খিদিরপুর ডক) এবং জাহাজ মেরামতের জন্য পাঁচটি ড্রাই ডক ও নটি জেটি রয়েছে।

৩। হলদিয়াঃ কলকাতা থেকে প্রায় 90 কিলোমিটার দক্ষিনে হুগলি নদীর মোহনা থেকে প্রায় 30 কিলোমিটার অভ্যন্তরে পশ্চিমবঙ্গের নবগঠিত জেলা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া মহকুমার অন্তর্গত হুগলী ও হলদি নদীর সঙ্গমস্থলে কলকাতার সহযোগী বন্দর হলদিয়া বন্দর গড়ে তোলা হয়েছে। কলকাতার সহযোগী হিসেবে অনেক বড় বড় জাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং ছোট ছোট জাহাজকে কলকাতা বন্দরে প্রেরিত করে। এই বন্দরের  প্রবেশ পথ সরল। এখানে জলের গভীরতা প্রায় 10 মিটার । যান্ত্রিক পরিবহন ব্যবস্থার সুবিধা বর্তমান।

৪।পারাদ্বীপঃ  বঙ্গোপসাগরের তীরে কটক শহর থেকে প্রায় 96 কিলোমিটার দূরে উড়িষ্যার উপকূলে মহা নদীর মোহনার কাছে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে পারাদ্বীপ বন্দর নির্মাণ করা হয় ।এটি একটি সমুদ্র বন্দর ।এই বন্দরের পোতাশ্রয় স্বাভাবিক । এখানে জলের গভীরতা প্রায় 12 মিটার । সমুদ্রগামী জাহাজ গুলো নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে।

৫। বিশাখাপত্তনমঃ  বঙ্গোপসাগরের তীরে অন্ধ্র উপকূলে বিশাখাপত্তনম বন্দরটি অবস্থিত । এটি ভারতের পূর্ব উপকূলের একটি উল্লেখযোগ্য বন্দর।বিশাখাপত্তনম বন্দর স্বাভাবিক পোতাশ্রয় যুক্ত একটি বন্দর।  এটি একটি স্থলবেষ্টিত বন্দর । ডলফিন নামক এক শ্রেণীর সামুদ্রিক প্রাণীর নাকের আকৃতিবিশিষ্ট অন্তরীপ  দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় সামুদ্রিক ঝড় ঝঞ্ঝার হাত থেকে মুক্ত।

৬। চেন্নাইঃ  বঙ্গোপসাগরের তীরে পূর্ব উপকূলে বা  করমন্ডল উপকূলে এবং তামিলনাড়ু রাজ্যে চেন্নাই বন্দরটি অবস্থিত। চেন্নাই একটি প্রান্তীয় সমুদ্র বন্দর । এই বন্দরের পোতাশ্রয়টি কৃত্রিম ও উৎকৃষ্ট ।  সমুদ্রের মধ্যে প্রায় 230 একর জমি প্রাচীর এর মাধ্যমে উত্তাল সমুদ্র তরঙ্গ থেকে সুরক্ষিত ।এখানকার জহরলাল ডকে একসাথে ৮ টি  জাহাজ একসাথে নোঙর করতে পারে.।

৭। নিউ তুতিকোরিনঃ  ভারতের পূর্ব উপকূলে তথা করমন্ডল উপকূলে মান্নার উপসাগরের তীরে অবস্থিত মাঝারি বন্দর তুতিকোরিন এর ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে নিউ তুতিকোরিন বন্দর অবস্থিত। .১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে সম্প্রসারিত করে প্রথম শ্রেণীর বন্দরে পরিণত করা হয়। এটি স্বাভাবিক পোতাশ্রয় যুক্ত এবং অগভীর । শ্রীলংকার সাথে ভারতের আদান-প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়।  এটি প্রধানত আমদানি বন্দর।

৮। কোচিন বা কোচিঃ  আরব সাগরের তীরে মালাবার উপকূলে কেরালা রাজ্যে কোচি বন্দরটি অবস্থিত।  কন্যাকুমারী থেকে প্রায় 320 কিলোমিটার উত্তরে এবং মুম্বাই বন্দর থেকে প্রায় 934 কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি  উৎকৃষ্ট ও স্বাভাবিক পোতাশ্রয় যুক্ত । সুগভীর সমুদ্র যুক্ত একটি প্রাচীন বন্দর । এটি একটি সামুদ্রিক বন্দর ও নৌঘাঁটি ।জাহাজ মেরামতির জন্য এখানে ২ টি ড্রাই ডক রয়েছে ।  সামুদ্রিক ঝড় ঝঞ্জা মুক্ত হওয়ায় এটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।

৯। নিউ ম্যাঙ্গালোরঃ  ভারতের পশ্চিম উপকূলে আরব সাগরের তীরে কর্ণাটক রাজ্যে নিউ ম্যাঙ্গালোর বন্দরটি অবস্থিত । পূর্বতন বন্দর ব্যাঙ্গালোরের  9 কিলোমিটার উত্তরে পানাম বাবু নামক একটি স্থানে নিউ ম্যাঙ্গালোর বন্দরটি স্থাপন ও সম্প্রসারিত করে প্রথম শ্রেণীর বন্দরে রূপান্তরিত করা হয় ।এই বন্দরটি গভীর সমুদ্র বিশিষ্ট , সুরক্ষিত ও স্বাভাবিক পোতাশ্রয় যুক্ত । বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজ প্রবেশ করতে পারে । এটি একটি সমুদ্র বন্দর । 

১০। মার্মাগাঁওঃ  আরব সাগরের তীরবর্তী কঙ্কন উপকূল জুয়াড়ি নদীর মোহনায় গোয়া রাজ্যের মার্মাগাঁও বন্দর টি অবস্থিত । একটি স্বাভাবিক উৎকৃষ্ট প্রোতাশ্রয় বিশিষ্ট ও গভীর সমুদ্র যুক্ত একটি বন্দর ।এটি   প্রধানত একটি রপ্তানি বন্দর। এখানে  একসাথে 50 টি জাহাজ বন্দরে আশ্রয় নিতে পারে

১১। কান্ডালাঃ  গুজরাটের কচ্ছ উপসাগরের পশ্চিম তীরে অবস্থিত । দেশভাগের ফলে করাচি বন্দর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তার অভাব পূরণের জন্য ১৯৫১ সালে কান্ডালা বন্দর গড়ে তোলা হয়। এটি একটি স্বাভাবিক পোতাশ্রয় যুক্ত বন্দর। এই বন্দরটি গভীর ও সুরক্ষিত। যে যেকোন আকারের জাহাজ এখানে  নোঙর করতে পারে ।  এখানে সমৃদ্ধ পশ্চাৎভূমি  আছে ও এটি একটি উপসাগরীয় বন্দর।

১২। জহরলাল নেহেরু বন্দরঃ  মুম্বাই বন্দর এর প্রায় 11 কিলোমিটার দূরে আরব সাগরের তীরে নবসেবা তে মহারাষ্ট্র রাজ্যের নবনির্মিত বন্দর জহরলাল নেহেরু বন্দরটি অবস্থিত । ১৯৮৯ সালের  ২৬  শে মে বন্দরটি  চালু হয়েছে  । এটি  ভারতের প্রথম কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত হাইটেক বন্দর । এর তিনটি কন্টেননার নামার বার্থ, একটি সার্ভিস বার্থ রয়েছে । এখানে  কম সংখ্যক শ্রমিক এর ব্যবহার করা হয় ।  এটি স্বাভাবিক পোতাশ্রয় যুক্ত  গভীর সমুদ্র বন্দর ।


আমাদের সাথে facebook page এ যুক্ত থাকতে এই লিঙ্কে click  করুন


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.