Ad-1

if( aicp_can_see_ads() ) {

Climate of India (part 1)


ভারতে মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সমূহ  : 

ভারতের জলবায়ুকে  মৌসুমি জলবায়ু বলা হয় ।  ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো হলোঃ

      ভারতের জলবায়ুর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ঋতু পরিবর্তন।  শীতকাল (অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) , গ্রীষ্মকাল ( মার্চ থেকে মে ) , বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর ) এবং শরৎকাল (অক্টোবর-নভেম্বর ) পর্যায়ক্রমিক আবির্ভাব ঘটে।  গ্রীষ্মকালীন সময়ে বায়ু জলীয় বাষ্প পূর্ণ হওয়ায় আদ্র গ্রীষ্মকাল এবং শীতকালীন সময়ে বায়ু জলীয় বাষ্পহীন হওয়ায়  শুষ্ক শীতকাল হয়।

   আদ্র গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ু যে দিক থেকে (দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে) প্রবাহিত হয় শুষ্ক শীতকালীন  মৌসুমী বায়ু ঠিক তার বিপরীত দিক (উত্তর-পূর্ব দিক থেকে)থেকে প্রবাহিত হয় ।

  ঋতু পরিবর্তন সংঘটিত হয় দুটি ভিন্ন ধর্মী মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে অর্থাৎ শীতকালীন দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালীন উত্তর পূর্ব মৌসুমি বায়ুর দ্বারা ।

 বৃষ্টিপাত একটানা হয়না  ।  চাপ বলয় স্থান পরিবর্তনের মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের সাময়িক বিরতি এই অঞ্চলের অপর একটি বৈশিষ্ট্য  ।  গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে , মেঘালয় পার্বত্য অঞ্চলে এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের প্রতিবাদ ঢালে প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়।

ভারতের ঋতু বৈচিত্র্যঃ   উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত এর তারতম্য অনুযায়ী ভারতের জলবায়ুকে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞগণ চারটি প্রধান বিদ্যুতে বিভক্ত করেছেন ।  যথাঃ

শীত ঋতুঃ      ডিসেম্বর ফেব্রুয়ারি মাসে  সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধের নিকটবর্তী অঞ্চলে লম্বভাবে কিরণ দেয় । সমগ্র ভারতে উষ্ণতার পরিমাণ যথেষ্ট কমে যায় । সুতরাং এই সমগ্র উত্তর গোলার্ধে  শীত ঋতু  বিরাজ করে ।

     জানুয়ারির প্রথমার্ধে সমগ্র এশিয়া মহাদেশের উষ্ণতার পরিমাণ যখন সর্বনিম্ন হয় তখনই শীতকালীন মৌসুমী বায়ু ভারতের স্থল ভাগ এবং জলভাগের উপর তার সম্পূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে । সুতরাং  এই সময় উত্তর ভারতে উষ্ণতা সাধারণত 10 ডিগ্রি থেকে 18 ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে এবং দক্ষিণ  ভারতে  24 ডিগ্রি থেকে 26 ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে ।  উত্তর-পশ্চিম ভারতের উষ্ণতা খুবই কম থাকে এবং   হিমালয়ের উঁচু অঞ্চলে এই সময় বরফ পড়ে ।

শীতকালে ভারত অপেক্ষা ভারত মহাসাগরের উষ্ণতা বেশি থাকে ।  তাই ভারতের উত্তর-পশ্চিমাংশে উচ্চচাপের এবং ভারত মহাসাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় ।

   ফলে বায়ু তার ধর্ম অনুযায়ী তাপের সমতা রক্ষার্থে উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হয় । ভারতের উপর দিয়ে  প্রবাহিত এই  বায়ুকে উত্তর পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলা হয় । এই বায়ু গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের উপর দিয়ে সাধারণত পশ্চিমবঙ্গের উত্তর পশ্চিম দিক থেকে এবং দাক্ষিণাত্য মালভূমি ও বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয় । উত্তর ভারতের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে জলীয়বাষ্প গ্রহণ করার সুযোগ পায় না।  তাই   বায়ু শুষ্ক থাকে । ফলে এই বায়ুর দ্বারা  উত্তর ভারতে বৃষ্টিপাত হয় না ।  কিন্তু এই বায়ু পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে অতিক্রম করে যখন বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন জলীয়বাষ্প গ্রহণ করার সুযোগ পায় এবং পূর্বঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে  তামিলনাড়ু  উপকূল অঞ্চল অর্থাৎ করমন্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটাতে সক্ষম হয় । এইজন্য শীতকালে তামিলনাড়ুর উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়

গ্রীষ্ম ঋতুঃ   এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে ভারতে বেশ গরম পড়তে থাকে । সূর্যের উত্তরায়ন এর সাথে সাথে ভারতের শীতের তীব্রতা ক্রমশ কমতে থাকে  । ফলে ভারতের সর্বোচ্চ উষ্ণতা বাড়তে থাকে  । মে মাসে এ দেশের সর্বাধিক উষ্ণতা লক্ষ্য করা যায় ।  মার্চ মাসে দাক্ষিণাত্যে উষ্ণতার পরিমাণ থাকে 38 ডিগ্রি সেলসিয়াস ,   এপ্রিলে গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে উষ্ণতার পরিমাণ 38 থেকে 43 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হয়  এবং   মে মাসে  উত্তর ভারতে বিশেষত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কাছে উষ্ণতা 48 ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে । এর ফলে উত্তর ভারতের উচ্চচাপ বলয় ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে ধীরে ধীরে নিম্নচাপ বলয় পরিণত হতে থাকে । এই সময় সমগ্র ভারতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্থানীয় নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় ।     আর ভারত মহাসাগরের উষ্ণতা কম  বলে সেখানে  তখন সেখানে উচ্চচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় । এইসময় পার্শ্ববর্তী উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হয়ে স্থানীয়ভাবে বৃষ্টিপাত ঘটায় । পাঞ্জাব, রাজস্থান ,  উত্তর প্রদেশ , বিহারে দুপুর থেকে লু  নামক একপ্রকার উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে ।
       বিহার , উত্তরপ্রদেশে বিকেল বেলা প্রায়ই   আঁধি  নামে  ধূলিঝড় হয়। এপ্রিল-মে মাসে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে আসতে শুরু করার সময় আসাম পশ্চিমবঙ্গে  কালবৈশাখী ঝড়ের প্রাদুর্ভাব ঘটে ।  এসময় পশ্চিম উপকূল অঞ্চলে প্রাক মৌসুমী বৃষ্টিপাত হয় । এই বৃষ্টিপাতকে দক্ষিণ ভারতে আম্র বৃষ্টি বলা হয়।  এই বৃষ্টিপাত আমের পক্ষে উপকারী।

বর্ষা ঋতুঃ    দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন জুন মাসের শেষ থেকে (একুশে জুন ) সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় ।উত্তর ভারতে উষ্ণতার পরিমাণ খুবই  বৃদ্ধি পায় ।পাঞ্জাব অঞ্চলে মৃদু নিম্নচাপ বলয় উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রবল শক্তি সম্পন্ন হয় এবং নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় অপেক্ষা বেশি শক্তিশালী হয়ে পড়ে  ।  এই সময় বায়ুর চাপের সমতা রাখার জন্য ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ বলয় থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতের নিম্নচাপ বলয়ের দিকে   দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু পাঞ্জাব অভিমুখে প্রবাহিত হয় ।  এই বায়ু জলভাগের  উপর থেকে প্রবাহিত হয়ে আসে বলে জলীয় বাষ্পপূর্ণ হয়ে থাকে । এই বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করার সময় ফেরেলের সূত্র অনুযায়ী উত্তর গোলার্ধের ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ুতে পরিণত হয় ।

         এই দক্ষিণ পশ্চিম বায়ু বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় বা ঋতুতে  আসে বলে একে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বলা হয় ।  এই বায়ু সর্বপ্রথম কেরালার মালাবার উপকূলের জুন মাসের প্রথমে এসে পৌঁছায়।  তারপর জুনের শেষে এই বায়ু ক্রমশঃ  মহারাষ্ট্র  ,মধ্যপ্রদেশ , আসাম , পশ্চিমবঙ্গ , বিহার উত্তর প্রদেশের মধ্য দিয়ে সবশেষে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পাঞ্জাব ও রাজস্থানের পশ্চিম প্রান্তে এসে পৌঁছায়। দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দীর্ঘপথ সমুদ্রের উপর দিয়ে আসে বলে জলীয়বাষ্প পূর্ণ থাকে এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালা , হিমালয় ও অন্যান্য উঁচু পর্বত গাত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।

দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতের দক্ষিণ সীমান্তে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয় । যথাঃ  আরব সাগরীয়  শাখা এবং বঙ্গোপসাগরীয় শাখা । 

 আরব সাগরীয়  শাখাঃ    দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয়  শাখা আরব সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই কেরালার মালাবার উপকূলের প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় । এই শাখা সরাসরি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার উপকূল থেকে প্রায় এক থেকে দুই কিলোমিটার উপরে উঠে পড়ে । প্রচুর জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু যত উপরে ওঠে ততোই  চাপ হ্রাসে  প্রসারিত ও শীতল হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।  এই কারণে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে 380 থেকে 500 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয় । পশ্চিমঘাট পর্বত অতিক্রমের পর  জলীয়বাষ্প কমে যায় ।

 আরব সাগরীয় মৌসুমী বায়ুর একটি শাখা  পশ্চিমঘাট পর্বতের বিভিন্ন গিরিপথ দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বৃষ্টিপাত ঘটায় ।  এই শাখা বিন্ধ্য  ও সাতপুরা পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে নর্মদা ও তাপ্তি নদীর উপত্যকায় মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত ঘটায় (125 সেন্টিমিটার)। মৌসুমী বায়ুর অপর শাখাটি  গুজরাটের কচ্ছ , কাথিয়াবাড় , রাজস্থান , পাঞ্জাব প্রভৃতির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই অঞ্চলে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে । এই বায়ু আরাবল্লী পর্বতের বাধা পেয়ে পর্বতের পূর্ব দিকে সামান্য বৃষ্টিপাত(১০০ সেমি ) ঘটায় । পরে উত্তর ও  উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে  পশ্চিমে প্রবাহিত মৌসুমী বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখার সাথে  মিলিত হয়ে পূর্ব-পশ্চিম হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে থাকে।

আমাদের সাথে facebook page এ যুক্ত থাকতে এই লিঙ্কে click  করুন

                                                                                                                       To be Continued..

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.