Ad-1

if( aicp_can_see_ads() ) {

ভারতের ভূপ্রকৃতি (Relief Of India : Part -2)


 ইতিপূর্বে আমরা  উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল  নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আমরা আলোচনা করব উত্তর ভারতের বিশাল সমভূমি,   পশ্চিমের সমভূমি এবং মধ্য ও পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি নিয়ে।

উত্তর ভারতের বিশাল সমভূমিঃ (Great Northern Plain)


 অবস্থানঃ    ভারতের উত্তরে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণে দক্ষিণাপথ  মালভূমির অন্তর্গত মধ্য ভারতের উচ্চভূমির মধ্যবর্তী অঞ্চল উত্তর ভারতের সমভূমি  নামে পরিচিত।

 আয়তনঃ  উত্তর ভারতের সমভূমি পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ২৫০০  কিমি দীর্ঘ এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রায়  ২৪০- ৩২০ কিমি প্রশস্ত।  সমগ্র সমভূমির আয়তন প্রায় ৬৫২০০০  বর্গ কিলোমিটার ।

ভূ-প্রকৃতিঃ  উত্তর ভারতের সমভূমির  ভূপ্রকৃতি সম্পূর্ণভাবে সমতল।  এর কোথাও কোন পাহাড় নেই এবং ভূমির উচ্চতার পার্থক্য খুব কম । শুধুমাত্র মাঝে মাঝে উঁচু ঢিবি , স্বাভাবিক বাঁধ ,  প্লাবনভূমি ,খাঁড়া পাহাড়  আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদী-নালা কর্তিত ক্ষয়প্রাপ্ত ভূমি প্রভৃতির অবস্থান এই সমভূমির বৈচিত্র্য এনেছে।  এই সমভূমি কোন অংশই সমুদ্রপৃষ্ঠ অপেক্ষা ৩০০  মিটারের বেশী উচু নয়।

আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যঃ  ভূ-প্রকৃতির চিত্র অনুযায়ী এই সমভূমিকে নিম্নলিখিত অঞ্চলে বিভক্ত করা যায় ।যথাঃ

ক।  পাঞ্জাব হরিয়ানা সমভূমিঃ  পাঞ্জাব- হরিয়ানা সমভূমি  শতদ্রু , বিপাশা -এবং ইরাবতী নদীর দ্বারা বাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে গঠিত হয়েছে । এই সমভূমি  অত্যন্ত সমতল  এবং এর গড়  উচ্চতা ২০০-৪০০  মিটারের মধ্যে।  উত্তর পূর্বে বিভিন্ন দোয়াব সমভূমি দেখা যায়।  যেমন ইরাবতী নদীর মধ্যে অমৃতসর কে কেন্দ্র করে বারি দোয়াব,  তার পূর্বেই বিপাশা ও শতদ্রুর  মধ্যে পাঞ্জাবের সর্বাধিক উন্নত অঞ্চল বিস্ত দোয়াব অবস্থান করছে ।

খ। গাঙ্গেয় সমভূমিঃ  এই অঞ্চল  পাঞ্জাব সমভূমির পূর্ব সীমানায়  যমুনা নদী থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রসারিত।  এর আয়তন ৩৫৭০০০  বর্গ কিলোমিটার । গাঙ্গেয় সমভূমি কে আবার তিনটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে ভাগ করা যায়  । যথাঃ

(i) উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমিঃ   উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির পশ্চিম সীমান্তে যমুনা নদী প্রবাহিত এবং এটি এলাহাবাদের কাছে গঙ্গার সাথে মিশেছে ।  গঙ্গা এবং যমুনা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল গঙ্গা-যমুনা দোয়াব  নামে অঞ্চল নামে পরিচিত । এর গড় উচ্চতা ১০০ মিটার।

(ii) মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমিঃ  মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমির  পশ্চিমাংশে অযোধ্যা সমভূমির পূর্বাংশ অবস্থান করছে । এই সমভূমির পূর্বদিকে রাজমহল পাহাড় অবস্থানের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেছে । বিহার অংশে গঙ্গার উত্তর দিকের সমভূমি অঞ্চল উত্তর বিহার সমভূমি  এবং গঙ্গার দক্ষিণের সমভূমি অঞ্চল দক্ষিণ বিহার সমভূমি  নামে পরিচিত । এর গড় উচ্চতা ৩০- ১০০ মিটার

(iii) নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমিঃ  নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমিটি  রাজমহল পাহাড় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রসারিত।

গ।  ব্রহ্মপুত্র সমভূমিঃ  এই সমভূমি অঞ্চলও  উত্তর ভারতের বিশাল সমভূমির অন্তর্গত। ব্রহ্মপুত্র এবং তার উপনদী সমূহের পলি দ্বারা গঠিত এই সংকীর্ণ উপত্যকা অঞ্চলটি  পূর্ব দিকে  সাদিয়া থেকে পশ্চিমে ধুবরি  পর্যন্ত প্রায় ৬০০  কিমি  দীর্ঘ  ও প্রায় ৭৫  কিমি প্রশস্ত । এর আয়তন প্রায় ৫৬০০০ বর্গকিমি । এই সমভূমির গড় উচ্চতা ৫০-১০০ মিটার।



পশ্চিমের সমভূমি বা শুষ্ক মরু অঞ্চলঃ ( Western Plains )

অবস্থান : পাঞ্জাব ও হরিয়ানা শুষ্ক সমভূমি দক্ষিণে ক্রমশ রাজস্থানের শুষ্ক সমভূমিতে পরিণত হয়েছে । সমগ্র পশ্চিম রাজস্থান অঞ্চল মরুভূমি ।  রাজস্থানের জয়সলমীর , বিকানির ও যোধপুর জেলায় এই অঞ্চলটি প্রসারিত হয়েছে ।  ভারতের পশ্চিমাংশে অবস্থিত বলে একে পশ্চিমের সমভূমি  বলা হয়।

আয়তনঃ  ভারতের অন্তর্গত মরু অংশটি  উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ৬৪০০  কিমি দীর্ঘ এবং এর বিস্তার প্রায় ৩০০ কিমি । সমগ্র অঞ্চলের আয়তন প্রায় ১৭৫০০০ বর্গকিমি।

 ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগঃ  ভূ-প্রকৃতির তারতম্য অনুযায়ী মরু  অঞ্চলকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথাঃ  মরুস্থলি, বাগর  এবং রোহী।


১। মরুস্থলিঃ  ভারতের মরু অঞ্চলের পশ্চিমাংশটি মরুস্থলি -এটি বালুকা পূর্ণ ও শুষ্ক মরু অঞ্চল। এই অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে চলমান বালির পাহাড় দেখতে পাওয়া যায়।  এদের ধ্রিয়ান বলে। অনেক সময় বায়ুপ্রবাহের আড়াআড়িভাবে অবস্থিত তির্যক বালিয়াড়ি বা বাখান অবস্থান করতেও দেখা যায় ।এই অংশে বহু প্লায়া হ্রদ (রণ) এবং বহু লবন হ্রদ বা ধান্দ দেখা যায়।

২। বাগরঃ  মরুস্থলির  পূর্বদিকে বাগর অঞ্চলটি অবস্থিত।  এটি একটি অর্ধ মরু অঞ্চল। বাগর অঞ্চলের মধ্য দিয়ে লুনি নদী প্রবাহিত হয়েছে ।

৩।রোহীঃ  যেসব সমভূমি আরাবল্লী পর্বত থেকে আগত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদীর দু'পাশে পলি সঞ্চিত হয়ে সৃষ্টি করে এবং তা প্লাবনভূমি তার নাম রোহী । এইসব সমভুমির  মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গাঙ্গ সমভূমি এবং খোদওয়ার  সমভূমি।


মধ্য ও পূর্ব ভারতের উচ্চভূমিঃ  (Central & Eastern Highlands)

অবস্থানঃ  সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমির দক্ষিণে  সাতপুরা পর্বত এবং বিন্ধ পর্বতের  উত্তরে অবস্থিত মধ্য ও পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি অঞ্চলটি পশ্চিমে আরাবল্লী পর্বত থেকে পূর্বে ছোটনাগপুর মালভূমির পশ্চিম বঙ্গের সীমানা বরাবর অবস্থান করছে।

 ভূ প্রাকৃতিক বিভাগঃ 

১। মধ্য ভারতের উচ্চভূমিঃ 

অবস্থানঃ  মধ্য ভারতের উচ্চভূমি অঞ্চলটি আরাবল্লী পর্বত থেকে পূর্বে শোন নদী উপত্যকার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত রেওয়ার  মালভূমি বা বিন্ধ্যের খাড়া ঢাল এবং দক্ষিনে নর্মদা উপত্যকার থেকে উত্তরে সিন্ধু গাঙ্গেয় সমভূমির দক্ষিণ সীমানা বরাবর প্রসারিত ।

ক। আরাবল্লী পর্বতঃ  আরাবল্লী পর্বতটি  আমেদাবাদের কিছুটা উত্তর থেকে দিল্লির দক্ষিণ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কিলোমিটার প্রসারিত।  এই বিস্তৃতি সাধারণত দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বে । আরাবল্লী সর্বত্র সমান উঁচু নয়। মধ্যাংশে রেওয়ারের দক্ষিণের  উচ্চতা সর্বাধিক।  এখানে এর গড় উচ্চতা ৬০০-৯০০ মিটারের মধ্যে।  আরাবল্লীর  সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট আবু (১১৫৮ মি )। বানস ও  লুনি নদী দুটি আরাবল্লীকে  বিচ্ছিন্ন  করেছে।

খ। পূর্ব রাজস্থান উচ্চভূমি এবং মধ্যভারতের পাথুরে মালভূমিঃ  এই মালভূমিদুটি  আরাবল্লীর  পূর্বে অবস্থিত এবং এটি বিন্ধ্য যুগের কাদা পাথর , বেলেপাথর প্রভৃতি শিলা দ্বারা গঠিত । অঞ্চলটি দক্ষিন পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বে ক্রমশ ঢালু হয়ে গেছে।  এই অংশের উচ্চতা ২০০-৫০০ মি। চম্বল ও  তার উপনদী বানস এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত।

গ।  বুন্দেলখন্ড মালভূমিঃ  গ্রানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত এই অঞ্চলের ভূমিরূপ গোলাকৃতি।  এই মালভূমি দক্ষিণ থেকে উত্তরে ঢালু হয়ে গেছে ।  এর গড় উচ্চতা ৩০০-১০০০ মিটার।

ঘ। মালব মালভূমিঃ  বিন্ধ্য পর্বতের ঠিক উত্তরে অবস্থিত লাভা গঠিত এই  মালভূমি অবস্থিত । এই অঞ্চলের পর্বত শিখর গুলো চ্যাপ্টাকৃতি । সমগ্র অঞ্চলটি  দক্ষিন পশ্চিম থেকে উত্তর- পূর্বে ঢালু এবং এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে বেতোয়া , সিন্ধু, চম্বল, পার্বতী ও মাহি নদী প্রবাহিত।

ঙ। রেওয়া মালভূমিঃ  বুন্দেলখন্ড মালভূমি ও শোন নদীর মাঝে এই  মালভূমি অবস্থিত। বিন্ধ্য যুগের কাইমুর, রেওয়া ও ভান্ডার বেলেপাথরের গঠিত তিনটি মালভূমি দক্ষিনে একটি বৃহৎ খাড়া ঢাল মিশেছে ।এই খাঁড়া ঢাল কাইমুর পাহাড়  নামে পরিচিত।

চ। বিন্ধ্য পর্বতঃ এই  পর্বত পশ্চিম উপকূলের কাছ থেকে প্রায় ১০৫০ কিমি দীর্ঘ।  সাধারণত এই পর্বতের উচ্চতা ৩০০ মিটারের মধ্যে।

ছ।  নর্মদা উপত্যকাঃ উত্তরে বিন্ধ্য ও দক্ষিনে সাতপুরা পর্বতের  মধ্যবর্তী স্থানে চ্যুতির ফলে অবনমিত হয়ে একটি গ্রস্ত উপত্যকা সৃষ্টি করে এবং তার মধ্যে দিয়ে নর্মদা নদী পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে।

২। পূর্ব ভারতের উচ্চভূমিঃ

অবস্থানঃ  মধ্যপ্রদেশের বাঘেলখন্ড,  ছত্রিশগড় ; উড়িষ্যা দণ্ডকারণ্য অঞ্চল ;  ঝাড়খণ্ডের ছোটনাগপুর মালভূমি ; রাঁচি  মালভূমি ,  হাজারীবাগ  মালভূমি  এবং রাজমহল পাহাড় সমন্বিত অঞ্চলটি পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি।

ভূপ্রকৃতিঃ  ভূ-প্রাকৃতিক গঠনের তারতম্য অনুযায়ী পূর্বের উচ্চভূমি কে আরো কতগুলো ভাগে ভাগ করা যায় । যেমনঃ

ক। বাঘেলখন্ড মালভূমিঃ  এই মালভূমি মহাকাল পর্বতের  পূর্বে এবং মহানদী অববাহিকার উত্তরে অবস্থিত । এটি গ্রানাইট শিলা এবং বিন্ধ্য যুগের পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত । এই মালভূমির মধ্য দিয়ে রিহান্দ নদী উত্তরে শোন  নদীতে মিলিত হয়েছে ।

খ। ছোটনাগপুর মালভূমিঃ এই মালভূমি বাঘেলখন্ড মালভূমির পূর্বে ঝাড়খন্ড ও  পশ্চিমবঙ্গের ( বাঁকুড়া,  পুরুলিয়া,  বর্ধমান,  পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা )  অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ।  এই মালভূমির চারটি প্রাকৃতিক বিভাগ রয়েছে।  যথাঃ  রাচি মালভূমি,  হাজারীবাগ মালভূমি (৭০০ মি ),  কোডারমা মালভূমি এবং দামোদর উপত্যকা ।  আগ্নেয়গিরির লাভা নিয়ে দিয়ে গঠিত রাজমহল পাহাড় উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত এবং ৩০০-৪৫০ মিটার উঁচু ।


গ।  মহানদী অববাহিকাঃ   এই অববাহিকা বাঘেলখন্ড মালভূমির  দক্ষিনে অবস্থিত । এর  গড় উচ্চতা ২০০ মিটার এবং চারদিকে রয়েছে ৬০০-১০০০ মিটার উঁচু পাহাড় ।  মহানদী  অববাহিকার মধ্যভাগ ছত্তিসগড়  সমতল ক্ষেত্র   নামে পরিচিত।


 ঘ। দণ্ডকারন্যঃ  এই অঞ্চলটি ছত্রিশগড় সমভূমির দক্ষিণে বাস্তার ,করাপুট ও কালাহান্দি জেলাগুলয়  নিয়ে গঠিত ।কোরাপুট অঞ্চলটি সর্বাধিক উচ্চ (১২০০ মি )। পাহাড় গুলোর উচ্চতা ৪০০-১০০০ মি। বোনাই,  কেওনঝড় ও সিমলিপাল পাহাড়গুলো এর অন্তর্গত। এই অঞ্চলকে বলে গড়জাট


আমাদের সাথে facebook page এ যুক্ত থাকতে এই লিঙ্কে click  করুন। 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.